মুক্তিযোদ্ধাদের কটূক্তির দায় কার?

0
384
  • শহীদ ইমন

মানুষের জীবন অবশ্যই কস্টময়। জীবনে অনেক কষ্ট থাকে, এরমধ্যে কিছু কষ্ট ভুলে যায়, আবার কিছু কষ্ট মাঝেমধ্যে মনে পড়ে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে কোটা সংস্কারের ব্যানারের আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের যে অপমান করা হয়েছে, সেই কষ্ট কখনো ভুলবার নয়। আজ সত্যিই সত্যিই সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে নয়, আমার খারাপ লাগে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানাদিদের নিয়ে যে, আমানবিক ট্রোল এবং কটূক্তি, সেটা নিয়ে। এর সাথে যোগ হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছবি সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) বিদ্রূপ করা। অনেকে আবার বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও ট্রল করেছে। বঙ্গবন্ধুর দেয়া সিদ্ধান্ত (কোটা) নিয়ে সংশয় তুলে এর সংস্কারের জন্য ধ্বংসাত্মক এই আন্দোলনে কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুর রেফারেন্স ব্যবহার করা।

প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিতে আলোচনায় অংশ নেয়া মন্ত্রীর আশ্বাসেও গুজব, দমন, নিপীড়ন চালিয়ে যাওয়া। সর্বোপরি, নেত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে দেশকে অকার্যকর করার অপচেষ্টা। কোটার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা আন্দোলন করে নাই। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল বঙ্গবন্ধুর উপহার। এটা খুব সহজে বুঝা যায়, এটা এমন এক কুট চালাকি যা মীরজাফররাও করতে পারেনি। ভারতীয় উপমহাদেশে এমন কুট চালাকি আর হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে এটা সকল কুট চালাকির সম্মিলিত একটা রূপ বললে সঠিক হতে পারে।

তাদের ভাষ্যমতে, মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে তাদের কোন আন্দোলন ছিল না। এখন সব কোটার সাথে মুক্তিযোদ্ধা কোটাও বাতিল হল। এরপর তারা কি একবারও বলেছে যে, মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল তারা চায়নি। মূলত এটা ছিল কোটা বাতিলের আন্দোলন, যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পেরেছেন। তার সাথে ছিল ছাইচাপা সরকারবিরোধী আন্দোলন যেখানে সরকার তুষ না দিয়ে পানি ঢেলে দিয়েছেন। এতে হয়ত অনেক বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী খুব কষ্ট পেয়েছেন।

তাদের পরামর্শক বুদ্ধিজীবীরা চেয়েছিল ৭১’এ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে এসেছিল কেন? ত্রিশ লাখ নাম না জানা শহীদের সাথে তারাও লাশ হয়ে যেত। কিন্তু তারা বুঝেন না, সবাই মারা গেলে দেশ স্বাধীন হত কিভাবে? যুদ্ধে তারাই জয়ী হয় যে পক্ষের যোদ্ধাদের মধ্যে কাজুয়ালিটি কম হয়। তাছাড়া মরার জন্য যুদ্ধে গেলে যে, তাকে যে আল্লাহ মরণ দিয়ে দিবেন, সেটা আল্লাহই ভালো জানেন। মুক্তিযুদ্ধে যেতে না পারা, হিংসার অনলে পোড়া বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান সেই একাত্তর পরবর্তী সময় থেকে মেনে নিতে পারেন নাই।

যাহোক তারা সফল, তারা বিজয়ী। যাদের রক্ত ১০০ শতাংশ বাঙালি কোটা এনে দিল, আজ তাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ করা হল। জানি না, আন্দোলনের শেষের দিকে কত শতাংশ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা জড়িত হয়েছিল। যারা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের একমাত্র সম্বল সম্মানটুকুও কেড়ে নেয়ায় মত্ত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে আজ তারা তৃপ্ত, সন্তুষ্ট। কিন্তু যে অপমান করা হয়েছে, তার জন্য একবারও কি ক্ষমা চেয়েছেন?

বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু কন্যার ছবিতে ফুলের মালা আর ‌‌‘মাদার অফ এডুকেশন’ উপাধি দিয়ে ক্ষমার কাজ সারতে চান?

এত এত বারনিং ইস্যু থাকতে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে এবং সফলতাও এসেছে। কারণ, আমরা জানি। মুক্তিযোদ্ধারা অধিকাংশই গরিব, তাই তাদের নিয়ে আন্দোলন করলে কিছু হবে না। আসলেই কিছু হবে না। এই বুর্জোয়া সমাজে অবহেলিত আর অসহায় মানুষদের কোন মূল্য নাই।

টকশোগুলােতে অনেকে তাদের স্বার্থপর বলছে। কিন্তু আমি স্বার্থপর বলতে চাই না, তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মান করতে জানে না, করে না, সেটাই বলতে চাই। আর কুট চালাকি একদিন এই দেশের কৃতজ্ঞ মানুষ ঠিকই ধরতে পারবে। সেই দিন যারা হুজুগে আন্দোলনকারী, তারা নিজেরাই নৈতিক বিচারের মুখোমুখি হবে। আর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা যেমন ছিল তেমনই থাকবে, যেমনটি ছিল একাত্তরে এবং গত ক’দিনে।

লেখক: ফ্রিল্যান্স কলামিস্ট

আজসারাবেলা/কলাম/রই/১৩/এপ্রিল/২০১৮