সারাবেলা ডেস্ক : অবাক হয়ে ভাবছেন, এত ধরণের খাবার থাকতে পোকা খেতে যাবে কে? না, অবাক হবার কিছু নেই। পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করাটাও হয়ে পড়েছে কঠিন। আর তাই পোল্যান্ডের একটি ইউনিভার্সিটি প্রোটিনের উৎস হিসেবে বিভিন্ন ধরণের পোকাকে ব্যবহার করা যায় কিনা, তাই নিয়ে কাজ করছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ ৯ বিলিয়ন পার করে যাবে পৃথিবীতে মানুষের জনসংখ্যা। আর এত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে ৭০ শতাংশ। এমনটা বলা যত সহজ, করা ততটাই কঠিন। ক্রমশ কমে আসছে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ, মানুষে মানুষে ছেয়ে যাচ্ছে পৃথিবী ক্রমশ। কোথায় আর কীভাবে তাহলে উৎপন্ন হবে পুষ্টিকর খাদ্য?
পোল্যান্ডের এই গবেষকেরা বলছেন, ভাজা ঝিঁঝিঁ পোকার স্বাদ অনেকটাই মুরগীর মতো। এই পোকা দিয়ে তৈরি খাবার খাদ্য সংকট মোকাবেলায় কাজে লাগতে পারে বলে জানান তারা। পোকা দিয়ে তৈরি চকলেট কেক, সালাদ এগুলো তৈরি করেছে পোল্যান্ডের রোক্ল ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা। তারা আরো বলেন, এসব পোকার শরীরে থাকে কম ফ্যাট এবং অনেক বেশি প্রোটিন। গরুছাগল পালার জন্য যতটা জায়গা লাগে তারচাইতে অনেক কম জায়গাতেই এসব পোকার খামার বসানো যাবে। ফসল ফলানোতে যে বিপুল পরিমাণ পানি খরচ হয়, সেটাও দরকার হবে না। এসব পোকা আপনি বাসাতেই পুষতে পারবেন। আর এদেরকে খাওয়া হলে পরিবেশের ওপরেও তেমন কোন প্রভাব পড়বে না।
এই ইউনিভার্সিটির গবেষক আনা জলনিয়ারচেক জানান, “আমাদের খাবার থেকে যা বেঁচে যাবে সেটাই আমরা এই পোকাকে খাওয়াতে পারব আর কিছুদিন বা কিছু সপ্তাহ পর আমাদের খাওয়ার জন্য নতুন নতুন পোকা জন্ম নেবে।”
পোকা হিমায়িত করে গুঁড়ো করা হতে পারে, বা সরাসরি ফ্রাইপ্যানে তেলে ভেজে নেওয়া যেতে পারে। তারা বলেন, ডিপ ফ্রাই করা ঝিঁঝিঁ পোকার স্বাদ চিকেন রোস্টের মত, লার্ভার স্বাদ বাদামের মতো আর পিঁপড়া খেতে কিছুটা ঝাল এবং কিছুটা টক। সবচাইতে বড় কথা হলো, এগুলো সবই পুষ্টিকর। এসব পোকায় ফ্যাট কম এবং প্রোটিন বেশি থাকায় অনেকেই ডায়েট ফুড হিসেবে এদেরকে ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ, আপনার ওজন কমাতেও কাজে আসবে এই পোকা। এছাড়াও এগুলোতে আয়রন, পটাশিয়াম এবং সোডিয়ামের মত খনিজ উপাদানও বেশি থাকে।
এই ইউনিভার্সিটির বাইরে দিয়ে যাতায়াত করা কিছু পথচারীকে এসব খাবারের টেস্টার বা ছোট অংশ খেতে দেওয়া হয়। অনেকেই সাহস করে তা চেখে দেখেন। একজন মন্তব্য করেন, ভবিষ্যতে হয়তো এগুলো তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে, আর দশটা স্ট্রিট ফুডের মতো এগুলোও পাওয়া যাবে রাস্তার পাশেই।
পুরো ঘটনার ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন এখানে-
পোকা খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই এই ইউনিভার্সিটি প্রথম নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায়, যেমন চীনের কিছু অঞ্চলে পোকামাকড় খাওয়াটা একেবারেই ডালভাত। তবে এই গবেষকেরা চেষ্টা করছেন সবার জন্যই পোকামাকড় খাওয়াটা উপাদেয় করে তুলতে, কারণ তাতে বিশ্বজোড়া খাদ্য সঙ্কটকে কিছুটা হলেও সামাল দেওয়া যেতে পারে। পোকাকে বিভিন্ন ধরণের খাবার খাইয়ে বড় করলে নাকি তার স্বাদটাও পাল্টে যাবে, এমনই আশ্বাস দিয়েছেন তারা। তবে এই পোকা দেখে এখন নাক সিটকালেও একটা সময়ে জনসংখ্যার চাপে এগুলোই হয়তো খেতে হবে অহরহ।
আজসারাবেলা/রবি/আর্ন্ত/অক্টো/১১/১৭