তারুণ্যের প্রথম ভোট স্বাধীনতার পক্ষে হোক: চিত্রনায়ক রিয়াজ

0
756

আহমেদ শিশির : সুচিন্তা ফাউন্ডেশন ও আজ সারাবেলা আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রচার কার্যক্রম ‘বঙ্গবন্ধুর গল্প শুনি, মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলি’ অনুষ্ঠানে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই চলচ্চিত্র অভিনেতা বলেন, তারুণ্যের প্রথম ভোট স্বাধীনতার পক্ষে হোক, উন্নত আগামীর জন্য হোক।

রোববার রাজধানীর প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটিতে এই কার্যক্রমের ৩৮তম অনুষ্ঠানে অতিথি আলোচকের বক্তব্যে রিয়াজ বলেন, আমরা যারা সিনেমা করি- আমরা অনেক কিছুর স্বাদ নিতে পারি। অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর মত। ইউনিভার্সিটির ছাত্র, পুলিশ, সন্ত্রাসী, উকিল এমনকি মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রেও অভিনয় করেছি। হুমায়ুন আহমেদের ‘শ্যামল ছায়া’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘মেঘের পরে মেঘ’ মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত ছবি। মুক্তিযোদ্ধাদের যে অবদান, ত্যাগ যে দুর্বিষহ কষ্ট তারা করেছে তা অনুভব করেছি।

বীরশ্রেষ্ট ফ্লাইট লে. মতিউর রহমানের কথা মনে পড়ছে। যুদ্ধের সময় স্ত্রী ও তার দুই সন্তান মাহিন, তুহিনসহ আটক হয়েছিলেন পাকবাহিনীর হাতে পশ্চিম পাকিস্তানে। সেখানে তাকে আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছিল। তখন তিনি মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার জন্য স্ত্রী-সন্তান পাকিস্তানের ক্যাম্পে রেখেই একটি ফাইটার বিমান নিয়ে পালিয়ে যায় আকাশ পথে পাকিস্তানি সেনাদের উপর আক্রমনের উদ্দেশ্য নিয়ে। কিন্তু বিমান নিয়ে পালানোর পরে ইন্ডিয়ার আকাশে আসার পর বিমানটি ক্র্যাশ করে। নিহত হন ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান। দেশের জন্য কতটা প্রেম থাকলে একজন মানুষ তার স্ত্রী সন্তান রেখে এভাবে জীবন দিতে পারে। তারপর স্বাধীনতার পর তাকে বীরশ্রেষ্ট উপাধি দেওয়া হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যই আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হতে পেরেছি।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এই চিত্রনায়ক আরো বলেন, অফিসিয়ালি মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল নয় মাস কিন্তু এর যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল অনেক বছর আগে থেকে। যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই এদেশের মানুষকে স্বাধীন হবার স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং তা বাস্তবায়ন করেছেন। জীবনের প্রায় ১৪ বছর জেলখানায় কাটিয়েছেন দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। দেশ স্বাধীন করলেন।

যুদ্ধবিধস্ত দেশটাকে সোনার বাংলায় রুপান্তর করার স¦প্ন নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট এদেশের কিছু পাকিদোসর, যারা পাকিস্তানের সমর্থক ছিল বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছিল। ১০ বছরের শিশু রাসেলকেও তারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। বিদেশে থাকায় বেঁচে যায় দুই কন্য শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। দেশে ফেরার পর নিজেদের বাড়িতে পযর্ন্ত উঠতে পারেননি জননেত্রী শেখ হাসিনা। ৩২ নম্বরের রাস্তায় আন্দোলন করেছে। ২১ বার মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে এসেছেন।

পিতার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশ। আরএমজি সেক্টরে বিশ্বে ২য় স্থানে বাংলাদেশ। মহাকাশে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট, রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন, ব্রীজ, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে রোল মডেল। তাই উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে তোমাদের মত তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির সাথে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হান্নান চৌধুরী। তিনি বলেন, বাঙালির অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ। কিছুতেই আপোষ করেননি তিনি। শুধু চেয়েছিলেন পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তিপাক এই ভূখণ্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আজীবন ছাত্রত্ব বাতিল হবার পরোয়াও করেননি তিনি। তাইতো সকল আন্দোলন সংগ্রামে জয়ী হয়ে লাল সবুজের পতাকা এনে দিয়েছেন, দিয়েছেন স্বাধীন বাংলাদেশ।

 

বঙ্গবন্ধু না হলে এই দেশটাই স্বাধীন হতো না। এই বিশ্ববিদ্যালয় হত না। বিদেশে যেয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারতাম না। এই ভূখণ্ডের নাম বাংলাদেশ হতো না। তাই বঙ্গবন্ধুকে জানা শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি মনে করি। বাকী কাজটা তরুণদেরই করতে হবে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তোমাদেরই গড়তে হবে।

অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন স্কুল অব সায়েন্স বিভাগের ডিন ড. ওমর ফারুক, স্কুল অব বিজনেস বিভাগের ডিন, অধ্যাপক হাবিবুর রহমান এবং প্রাইমএশিয়ার রেজিষ্টার অধ্যাপক আবুল কাশেম মোল্লা।

অনুষ্ঠানে চিত্রনায়ক রিয়াজ এবং আজসারাবেলা’র সম্পাদককে ক্রেস্ট ও মগ দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. আব্দুল হান্নান চৌধুরী। আজ সারাবেলা ও সুচিন্তার পক্ষ থেকে প্রাইমএশিয়ার ভিসি ও আলোচকদের মগ দিয়ে শুভেচ্ছা জানান রবিউল ইসলাম রবি।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আজ সারাবেলা’র সম্পাদক জববার হোসেন।

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই প্রচারাভিযানের মিডিয়া পার্টনার ‘দৈনিক খোলা কাগজ’ ও ‘পরিবর্তন ডট কম’।আয়োজিত কার্যক্রমের সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, নীলসাগর গ্রুপ ও নর্দান ইউনিভার্সিটি।

আজসারাবেলা/সংবাদ/রই/জাতীয়/মুক্তিযুদ্ধ